পিনাকী ভট্টাচার্যের ভিডিও’র বক্তব্য নিয়ে কথা

 পিনাকী ভট্টাচার্য ভ্যাকসিন নিয়ে একটি ভিডিও তৈরী করেছে।  ভিডিওটি দেখে কয়েকটি কথা মাথায় আসলো-


১) করোনা ভ্যাকসিনের বিরোধীদের তিনি ঢালাওভাবে ভ্যাকসিন বিরোধী বানিয়ে দিয়েছেন। আমার কথাই যদি বলি, আমি কিন্তু ভ্যাকসিন বিরোধী নই।  আমি নিজেও নিজের শরীরে অনেক ভ্যাকসিন নিয়েছি। কিন্তু আমি বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিনেশনের বিরোধীতা করছি কারণ আমি চলামান করোনা ভ্যাকসিনের ইফিকেসি (কার্যকরীতা) ও সেফটি (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) নিয়ে সন্দিহান। শুধু করোনা ভ্যাকসিন নয়, আমার শরীরে যে কোন ওষুধ প্রবেশ করানোর আগে আমার অধিকার আছে, ঐ ওষুধটির ইফিকেসি ও সেফটি সম্পর্কে জানা। এবং ঐ ওষুধ কোম্পানি ও তার সংশ্লিষ্টদের উচিত সেটা সম্পর্কে সু-স্পষ্ট ধারণা দেয়া। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয়, কোভিড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই ইফিকেসি ও সেফটি নিয়ে ভ্যাকসিন কোম্পানি ও তার প্রচারকরা লুকোচুরি করে চলেছে। কেউ সত্যটা প্রচার করলে তাকে গুজবকারী, মিস-ইনফরমেশন দাতা বা পিনাকী ভট্টাচার্যের ভাষায় ইনফোডেমিক-কারী ট্যাগ দিচ্ছে। কেউ সত্য প্রচার করলে তাকে রাজাকার বলা হচ্ছে কিংবা তার ডাক্তারি সার্টিফিকেট কেড়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এটা কেন ?? একটি আরএনএ পজিটিভ সেন্সের আন-স্টেবল ভাইরাসের বিপক্ষে ভ্যাকসিন ১০-২০ বছরেও বের করা সম্ভব হয় না, আর করোনা ভ্যাকসিন মাত্র ৮ মাসে বের করেছেন, ওষুধ প্রশাসন থেকে ইমারজেন্সি অথরাইজ করেছেন, সেটার সেফটি ও ইফিকেসি নিয়ে কথা উঠতেই পারে। খোদ আমেরিকার সিডিসির ওয়েবসাইটে করোনা ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হৃদরোগ হতে পারে বলে বিবৃতি আছে। কিন্তু সেই কথাটা কোন সাধারণ মানুষ বললেই তাকে ভ্যাকসিনবিরোধী বলবেন, এটা কেমন কথা? আপনি মুখে বাক স্বাধীনতার কথা  বলবেন, বাক স্বাধীনতা চাইবেন, কিন্তু একজন লোক তার শরীরে একটি ভ্যাকসিন প্রবেশ করানোর আগে তার সেফটি ও ইফিকেসির প্রমান চাইলে তাকে ভ্যাকসিন-বিরোধী বলে মিথ্যা ট্যাগ দিবেন, তাকে রাজাকার বলে হেনস্থা করবেন, তার দেয়া তথ্যকে মিস-ইনফরমেশন বলে উড়িয়ে দিতে চাইবেন এটা তো মেনে নেয়া যায় না।

২) কোভিড১৯ বা ভ্যাকসিন নিয়ে এখনও কোন গবেষণাই কিন্তু চূড়ান্ত বা পরিপূর্ণ নয়। এখনও ভ্যাকসিনের বিষয়টি্ ট্রায়াল স্টেজেই আছে। একটা ওষুধ যখন ট্রায়াল স্টেজে থাকে, তখন ঐ ওষুধ গ্রহিতার প্রতিটা স্টেজ অবজারভেশন করতে হয়। যেমন- একজন লোক একটি ভ্যাকসিন নিলো, নেয়ার পর ঐ লোক কোন কন্সট্রাকশন বাড়ির নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় মাথায় ইট পরে মারা গেলো। কিংবা রোড অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেলো। কিংবা আত্মহত্যা করলো। ওষুধ বিজ্ঞান মতে এটাও হিসেব করতে হবে। কারণ এটাও আশঙ্কা থাকে, ঐ ভ্যাকসিন বা ওষুধ গ্রহণের ফলে ঐ ব্যক্তিটি মানসিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে বেখেয়াল হয়ে যাচ্ছে, যার দরুণ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন, কিংবা সুইসাইডাল হয়ে পড়ছে। যদি অনেকগুলো একই ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়, তখন সেগুলো হিসেবে এনে ঐ ওষুধ বা ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অংশ করতে হয়। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার পর দেশ-বিদেশে অধিকমাত্রায় করোনা আক্রান্ত হওয়া কিংবা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের অসংখ্য ঘটনা ঘটলে প্রতিকার চাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য গ্রহণ না করে বরং তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্য ভুল বা মিস ইনফরমেশন বলে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নেয়া লোক হয়ত অন্য রোগে আক্রান্ত ছিলো, তাই মারা গেছে। কিন্তু ভ্যাকসিনবিহীন কোভিড পজিটিভ রোগীর ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা করা হচ্ছে না,  যে কোন রোগেই মারা যাক, কোভিড-পজিটিভ হলে তাকে কোভিড ডেথ হিসেবে কাউন্ট করা হচ্ছে। এরকম দ্বি-চারিতার কারণেই কিন্তু ভ্যাকসিনের বিষয়টি আরো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

৩) পিনাকী ভট্টাচার্য দাবী করেছেন, অনেক ডাক্তার নাকি ভ্যাকসিন বিরোধী প্রচারে যুক্ত হয়েছেন।

এখানে স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন আসতে পারে, ভ্যাকসিনবিরোধী প্রচারে যুক্ত হয়ে ঐ ডাক্তারের লাভ কি

পিনাকি ভট্টাচার্য নিজেও একজন ডাক্তার। তিনি ভালো করেই জানেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদেরকে বিভিন্ন ওষুধ প্রচারের জন্য কমিশন দেয়। আর ভ্যাকসিন ব্যবসা তো বিরাট ব্যবসা। এক ফাইজার করোনা টিকা বিক্রি করে ৩ মাসে ২.২ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে। ভ্যাকসিনের পক্ষে বললেই তো বরং সেই লাভের অংশ কমিশন হিসেবে পাওয়া যাবে। সেখানে সেই কমিশন বাদ দিয়ে একজন ডাক্তার কোন স্বার্থে ভ্যাকসিন বিরোধী প্রচারণায় নামবেন, সেটা কি পিনাকি ভট্টাচার্য ক্লিয়ার করবেন ?

৪) পিনাকি ভট্টাচার্য বলেছেন, “ভ্যাকসিন নিলে বেশিরভাগ মানুষ করোনার সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হবেন না।”- এই তথ্যাটা সম্পূর্ণ ভুল ও ভ্যাকসিন কোম্পানির কমিশন খাওয়া টাইপ কথা।  যেমন- খোদ সিডিসি স্ট্যাডি করে বলছে, আমেরিকার ম্যাসাচুয়েটসে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ৭৪% লোক হচ্ছে ভ্যাকসিন নেয়া লোক। অথচ ম্যাসাচুয়েটসে দুই ডোজ কমপ্লিট করেছে ৬৩% লোক। তারমানে যে হারে ভ্যাকসিনেটেড হচ্ছে, তার থেকেও বেশি করোনা আক্রান্ত হচ্ছে, ভ্যাকসিন নেয়া লোকজন। (তথ্যসূত্র: সিএনবিসি, ৩০শে জুলাই, ২০২১)। একইভাবে ভারতের উত্তরাখণ্ডের ২৩০০ করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৯৩% পুলিশ দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। (তথ্যসূত্র: কলকাতা নিউজ টুডে, ৩রা জুন, ২০২১)

সুতরাং ভ্যাকসিন নিলে বেশিরভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয় না, পিনাকি ভট্টাচার্যের এই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুল বলে প্রমাণিত।

৫) পিনাকি ভট্টাচার্য বলেছেন, “টিকা নিলে লকডাউন খুলবে, অর্থনীত সচল হবে।”

তাহলে আমরা কি ধরে নিতে পারি না, একটি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী মানুষের জীবিকা আটকে রেখে তাকে টিকা নিতে বাধ্য করছে ? তাদের রোজগার বন্ধ রেখে তাদের গিনিপিগ বানিয়ে তাদের বানানো ভ্যাকসিন বা ওষুধের ট্রায়াল দিচ্ছে ? করোনা দমনে লকডাউন যে কার্যকরী কোন বিষয় নয়, এটা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন বুঝে। কিন্তু সেই লকডাউনকে হাতিয়ার বানিয়ে মানুষের শরীরে একটি সেফটি অনিশ্চিত ভ্যাকসিন নিতে বাধ্য করার বিষয়টি উৎসাহিত করা মোটেও মানবিক কোন কাজ হতে পারে না। দুঃখের বিষয় হলো, পিনাকি ভট্টাচার্য নিজেকে মানবতাবাদী দাবী করলেও সেই অমানবিক কাজটা ঠিকই করে ফেললেন।


Comments

  1. ফেসবুকে এই পোস্টে আপনি অনেকগুলো খবরের রেফারেন্স সহ লিংক দিয়েছিলেন। আমার ওই লিংক গুলো খুব দরকার ছিল।

    ReplyDelete
  2. রেফারেন্সগুলো কই?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বাংলাদেশে করোনার টিকা নিয়ে মৃতদের তালিকা

টিকা নিয়ে মানুষ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার গুরুত্বপূর্ণ স্ক্রিনশট (সংগ্রহে রাখুন)

প্রশ্ন-১: আপনি কি ভ্যাক্সিন বিরোধী (anti-vaxxer) ?